নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) আইসিইউর জন্য নির্ধারিত কোনো চিকিৎসক নেই। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে করোনা ওয়ার্ডের ১৮ শয্যার আইসিইউ চালু রাখা হয়েছে। আর সাধারণ রোগীদের ১০ শয্যার আইসিইউর কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। দুটো আইসিইউ জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা চলছে। বিভাগের জেলাগুলোর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ৪৭৩টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০, বরিশাল সদর হাসপাতালে ১৩, ভোলায় ১০০, বরগুনায় ১০০, পটুয়াখালীতে ৫০, ঝালকাঠী ও পিরোজপুরে ৩০টি করে শয্যা রয়েছে। এ ছাড়া ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই থেকে তিনটি করে শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই নেই। বরিশাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, যেসব হাসপাতাল ৫০ শয্যার, সেগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। বরিশাল নগরীতে রাহাত আনোয়ার, মমতা, আরিফ মেমোরিয়ালসহ কয়েকটি হাসপাতাল ৫০ শয্যার। কিন্তু সেগুলোতে করোনা রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার মতো আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নেই। জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালে ২০১৭ সালে ১০ শয্যার আইসিইউ ব্যবস্থা চালু করা হয়। জনবল না থাকায় দুই বছরের মধ্যেই অন্তত চারবার এই আইসিইউর কার্যক্রম বন্ধ হয়। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত না হওয়ায় ১০ শয্যার আইসিইউর সব যন্ত্রপাতি প্রায় বিকল। তবে কিছুদিন আগে সেগুলো মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। এ হাসপাতালে শুরু থেকে আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় পরে চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে চিকিৎসক সংখ্যা ছয়জন। প্রতিদিন তাঁদের বিভিন্ন অপারেশনে ব্যস্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে করোনা বিভাগের আইসিইউ পরিচালনাতেও সময় দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর কথা থাকলেও সংখ্যা স্বল্পতার জন্য তা করা যাচ্ছে না। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, করোনা ওয়ার্ডে নতুন করে ১৮ শয্যার আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকের পাশাপাশি ১০ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আইসিইউ চালু রাখা হয়েছে। পরিচালক আরো বলেন, এক হাজার শয্যার হাসপাতাল এটি। কিন্তু চিকিৎসকসহ পর্যাপ্ত জনবল নেই। এখানে ৫০০ শয্যার হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত চিকিৎসক ও স্টাফদের অর্ধেকেরও কম জনবল রয়েছে। এই জনবল দিয়েই ১৮ শয্যার আইসিইউসহ ১৫০টি শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, করোনা ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ১০ দিন পর পর কোয়ারেন্টিনে পাঠাতে হচ্ছে। তাই করোনা ওয়ার্ডের জন্য আরো ৫০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ ম-ল জানান, জেলাগুলোর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ৪৭৩টি। শুধু শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮ শয্যার আইসিইউ ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য কোথাও বেসরকারিভাবে আইসিইউ নেই। বরিশাল বিভাগে গত শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে। এর মধ্যে বরিশালে ১০, পটুয়াখালীতে ৭, পিরোজপুরে ৩, বরগুনায় ২, ঝালকাঠিতে ৩ ও ভোলায় দুজন মারা গেছে। এর মধ্যে ১৭ জনই মারা গেছেন চলতি জুন মাসে। এদিকে গত শুক্রবার পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে বরিশালে ৮১০, পটুয়াখালী ১২৫, পিরোজপুরে ৯৯, বরগুনায় ১০০, ঝালকাঠিতে ৭৮ ও ভোলায় ৮৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
Leave a Reply